জুমআর নামাজ পরার নিয়ম

hadithbangla-Jummar-Namaz-porar-nyom

জুমআর নামাজের হুকুম

জুমআর নামাজ সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন এবং প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের উপর ফরয! যদি ছেড়ে দেয়ার মতো! কোনো ওযর না থাকে।

এর দলিল:

১। আল্লাহ তাআলার বাণী :

,, يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ. إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوٰةِ مِن- , يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَىٰ ذِكۡرِ- ٱللَّهِ- وَذَرُواْ ٱلۡبَيۡعَۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ"

{হে মুমিনগণ,! যখন জুমুআর দিনে ু নামাজের জন্য আহবান করা হয়!, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও!। আর বেচা-কেনা বর্জন কর!।} [সূরা আল জুমআ:৯]

২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের! হাদীস, «জুমআর নামাজ তরক করা থেকে! মানুষের অবশ্যই বিরত হওয়া উচিত!। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে মহর লাগীয়ে দিবেন!। এরপর তারা নিশ্চিতরূপে গাফেলদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে!।» [বর্ণনায় মুসলিম]

যার ওপর জুমার নামাজ ফরয নয়

নারী, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু, মুসাফীর!, অসুস্থ ব্যক্তির যার জুমআর নামাজে অংশ নেয়া কষ্টকর!, এদের উপর জুমআর নামাজ ফরয নয়!। তবে এরা যদি নামাজে হাজীর হয় তবে তা শুদ্ধ হবে!। আর যদি হাজীলের না হয় তাহলে জুমআর পরিবর্তে যোহরের নামাজ পড়ে নীবে!।

জুমআর দিনের ফজিলত

জুমআর দিন হলো সপ্তাহের সর্বোত্তম দিন!। আল্লাহ তাআলা জুমআর দিনকে উম্মতের জন্য বিশেষ হাদিয়া হীসেবে দিয়েছেন!। জুমআর দীনের ফজিলতের ব্যাপারে বহু হাদীস এসেছে!। তন্মধ্যে কয়েকটি হলো নিম্নরূপঃ

১। সূর্যউদিত হয়েছে এমন দীনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমআর দিন!। এ দিনেই আল্লাহ তাআলা আদম.আ. কে সৃষ্টি করেছেন!।" এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে" প্রবেশ করানো হয়েছে!। এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে!।» (বর্ণনায় মুসলিম)

২। যে ব্যক্তি গোসল করল এবং জুমাআয় হাজীর হলো, অতঃপর সাধ্যমতো নামাজ পরলো!। এরপর খুতবা শেষ না হওয়া! পর্যন্ত বিনা বাক্যে মনোযোগসহ শুনল। অতঃপর! ইমামের সাথে নামাজ আদায় করলো!, তাহলে তার মাঝে এবং অন্য জুমআর মাঝে এমনকি এর অতিরীক্ত আরো তিন দিনে যা কিছু পাপগুনাহ হয়েছে তা মাফ হয়ে গেল!।» (বর্ণনায় মুসলিম)

৩। আবু হুরায়রা রাযি. বলেন!, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন: «পাঁচ নামাজ,; জুমআ থেকে জুমআ! রমজান থেকে রমজান- যদি কবীরা গুনাহ! থেকে বেঁচে থাকা হয়!- তবে এ সবের মাঝে যা হয়; তার জন্য কাফফরা!।» (বর্ণনায় মুসলিম)

জুমআ পাওয়া

মুসলমানের উচিত জুম-আর নামাজের জন্য আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়া ও সকাল- সকাল জুম-আয় চলে যাওয়া!। তবে যদি জুম-আর নামাজে যেতে দেরি হয়ে যায় আর দ্বিতীয় রাকাতে রুকু অবস্থায় ইমামকে পায় তবে জুম-আ হীসেবে! সে তার নামাজকে পূর্ণ করে নেবে। আর যদি দ্বিতীয় রাকাতের! রুকুতে ইমামকে না পায় তাহলে যোহর হিসেবে তার! নামাজকে পূর্ণ করে নেবে। অনুরূপভাবে ঘুম অথবা অন্যকোনো কারণে যে ব্যক্তির জুমআর! নামাজ ছুটে গেল সে জুমআর! পরিবর্তে যোহরের নামাজ পড়ে নেবে!। অর্থাৎ চার রাকাত নামাজ পড়ে নিবে!।

জুমআর দিন যা মুস্তাহাব

১। জুম-আর দিন সূরা কাহাফ পড়া মুস্তাহাব!। হাদীসে এসেছে, «যে ব্যক্তি জুম-আর দিন সূরাহ কাহাফ পড়ল,; দুই জুম-আর মধ্যবর্তী সময়টা তার জন্য নূর দ্বারা আলোকীত হলো!।» (বর্ণনায় হাকেম)

৩। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের! প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়া!। আবু মাসউদ আল আনসারি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,«তোমরা শুক্রবার দিন আমার প্রতি বেশি বেশী দরুদ পাঠ করো;' কেননা জুমআর দিন যে ব্যক্তি আমার !ওপর দরুদ পাঠ করে,, তার দরুদ অবশ্যই পেশ আমার' কাছে করা হয়।» (বর্ণনায় হাকেম)

৩। গোসল করা ও আতর ব্যবহার করা!, হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বলেছেন,«যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করলো ও সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল; অথবা তার্ বাড়িতে থাকা!, আতর লাগাল, এরপর বের হলো এবং দুই ব্যক্তিকে ফাক করে বসল না! তাহলে আল্লাহ তাআলা এই জুম-আ ও অন্য জুম-আর মাঝে তার যেসব গুনাহ হয়েছে তা মাফ করে দেবেন!।» (বর্ণনায় বুখারী)

জুমআর মাসায়েল

১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিম্বারের!, অনুসরণে মিম্বারের ক্ষেত্রে সুন্নত হলো তিনধাপবিশিষ্ট হওয়া!।

২। জুম-আর আযান হওয়ার! পূর্বে মসজিদে বসে বিশেষভাবে কুরআন! তিলাওয়াত শোনা!।

৩। মাইকে সমবেত যিকর এবং হামদ না»ত পড়ার যে প্রথা কোথাও কোথাও দেখা যায়!, তা সুন্নতের পরিপন্থি।

৪। যখন মুসল্লী মসজিদে হাজির হয়! ও ইমাম খুতবা দিতে থাকে তখন হালকাভাবে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেবে!, কেননা হাদীসে এসেছে!, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া! সাল্লাম বলেছেন, «যখন ইমাম খুতবা দেয়ার সময় তোমাদের! কেউ মসজিদে আসে তখন যেন !সে দু রাকাত নামাজ পড়ে নেয়!, আর তা যেন সে হালকাভাবে পড়ে!।» (বর্ণনায় ইবনে খুযাইমাহ)

৫। খুতবার সময় দুআ করার সময় খতিব তার তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ইশারা দেবে!। ইস্তিস্কা অথবা! বৃষ্টি বন্ধের জন্য দুআ করার! সময় ব্যতীত ইমাম তার হাত উঠাবে না। হুসাইন ইবনে আবদির রহমান রাযি থেকে বর্ণিত! তিনি বলেন। <«আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুতবার সময় দুআ! করা অবস্থায় এভাবে বলতে শুনেছি - এই বলে তিনি তার হাত দিয়ে ইশারা দিলেন!।» (বর্ণনায় আহমদ)

৬। জুম-আর নামাজের! পূর্বে চার রাকাত সুন্নত নামাজ বলতে কিছু নেই!। তবে দ্বিতীয় আযানের! পূর্বে সাধারণ নফল নামাজ পড়া মুস্তাহাব।

এর প্রমাণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া! সাল্লামের হাদীস, «যে ব্যক্তি জুম-আর দিন গোসল করল এবং সাধ্যমতো পবিত্রতা! অর্জন করল তেল ব্যবহার করল, অথবা তার বাড়িতে থাকা আতর লাগাল, এরপর বের হলো ও দু ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে বসলো না তাহলে আল্লাহ তাআলা এই জুমআ ও অন্য জুম-আর মাঝে তার যে গুনাহ হয়েছে তা মাফ করে দেবেন!।» (বর্ণনায় দারামী)

৭। জুম-আর পরে দু রাকাত কিংবা চার! রাকাত নামাজ পড়া সুন্নত!। ইবনে উমর রাযি!, বর্ণনা করে বলেন«রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুম-আর পরে তাঁর ঘরে দু রাকাত নামাজ পড়তেন।» (বর্ণনায় সিহাহ সিত্তার' মুহাদ্দিসীনগণ)! অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,«তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুম-আর পরে নামাজ পড়তে চায় সে যেন চার রাকাত নামাজ পড়ে।» (বর্ণনায় মুসলিম)! আর এ নামাজ ঘরে পড়াই উত্তম।

যদি ঈদ ও জুমআ একত্রিত হয়,; তাহলে অধিক সতর্কতা হলো ঈদ ও জুমআ উভয়টিই আদায় করা!। আর জুমআ না পড়লে যোহরের!।

নামাজ তো অবশ্যই পড়তে হবে!। অবশ্য যারা জামে মসজিদ ু থেকে দূরবর্তী এলাকায় বসবাস করে তারা জুম-আর নামাজে উপস্থিত না হলেও কোনো সমস্যা নেই!। ইয়াস ইবনে আবি রামলা আশ্শামী রা. বলেন, «আমি মাআবিয়া. রাযি., কে যায়েদ ইবনে আরকাম রাযি.এর কাছে এই বলে প্রশ্ন করতে দেখেছি যে, আপনি কি জুমআ এবং ঈদ এক দিনে হয়েছে এমন কোনো দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হাজির ছিলেন?! তিনি বললে, হ্যাঁ;, ছিলাম। তিনি দিনের শুরুতে ঈদের নামাজ পরেছেন, এরপর জুম-আর ব্যাপারে সুযোগ দিয়ে বলেছেন, যে জুমআ পড়তে চায় সে যেন পড়ে নেয়!।» (বর্ণনায় আহমদ)

জুমআর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত

১। ওয়াক্ত: অতএব ওয়াক্ত হওয়ার আগে জুম-আর নামাজ শুদ্ধ হবে না!। ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পরও জুম-আর নামাজ শুদ্ধ হবে না, অন্যান্য ফরয নামাজের মতোই!। আর যোহরের নামাজের ওয়াক্তই জুম-আর নামাজের ওয়াক্ত!।

২। জামাত: জামাত করা যায় এমন সংখ্যক লোকদের উপস্থিতি জুম-আর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। অতএব এককভাবে জুম-আর নামাজ আদায় হয় না।আর জামাত হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন! সংখ্যা হলো তিনজন।

৩। স্থায়ী বসতি থাকা: অর্থাৎ জুম-আর নামাজ এমন !জনপদে কায়েম হতে হবে যেখানে স্থায়ীভাবে! বসবাসের জন্য বাড়িঘর রয়েছে!,.হোক তা ইঁট-পাথর দ্বারা নির্মিত বা প্রথা !অনুযায়ী অন্যকিছু দিয়ে তৈরি। .অতএব মরুপল্লী ও অস্থায়ী !তাবুতে বসবাসকারীদের ওপর জুম-আর! নামাজ ফরয নয়।, এমনকি তারা যদি জুমআর নামাজ আদায় করে তবে! তা শুদ্ধ হবে না।

৪। জুমআর পূর্বে দুটি খুতবা দেয়া:. কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো !খুতবা ব্যতীত জুমআর নামাজ পড়াননি।

জুমআর নামাজ আদায় পদ্ধতি।

জুম-আর নামাজ. দুই রাকাত। উভয় রাকাতে প্রকাশ্য আওয়াজে! কিরাত পড়তে হবে!। «প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আল জুমআ, এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আল মুনাফিকূন অথবা প্রথম রাকাতে সূরা আল আ-লা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল গাশিয়া পড়া সুন্নত!» (বর্ণনায় মুসলিম)

দুই খুতবা

দুই খুতবার হুকুম

দুই খুতবা ওয়াজিব। জুমআ শুদ্ধ হওয়ার! জন্য এ দুই খুতবা শর্তও বটে। যদি উপস্থিত মুসল্লীদের অধিকাংশ! আরবি ভাষা বুঝে ও আরবি বাক্যের অর্থ উদ্ধারে সক্ষম !থাকে, তাহলে আরবিতেই খুতবা দিতে হবে!। তখন এটাই হবে আরবি ভাষার !প্রতি গুরুত্ব প্রদানের! দাবি। উপরুন্তু আরবি ভাষায় খুতবা! প্রদান করলে' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের! খুতবা প্রদান-বিষয়ক আদর্শের অনুকরণ,! থেকে বিচ্যুতিও ঘটে না!।

তবে যদি অধিকংশ শ্রোতা আরবি ভাষা না বুঝে!, ;তাহলে অন্য ভাষায়ও খুতবা প্রদান করা যেতে পারে,; কেননা খুতবার মূল উদ্দেশ্য হলো ওয়াজ ও নসীহত!। শুধুই কিছু শব্দমালার ;;মৌখিক উচ্চারণ! খুতবা প্রদানের মূল উদ্দেশ্য নয়। তবে কীছু আরবি !বাক্য সংযোজনের প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি!, যেমন কুরআনের আয়াত,; কিছু হাদীস; যাতে!, আলেমদের মধ্যে যারা আরবি ভাষায় খুতবা! প্রদান ওয়াজিব মনে করেন তাদের মতানুযায়ী আমলও হয়ে! যায়!।

খুতবার সম্পূরক বিষয়সমূহ

খুতবার কোনো! ফরয-রুকন নেই। বরং প্রথা অনুযায়ী যা খুতবা বলে! পরিচিত তা হলেই খুতবা হয়ে যাবে,,। তবে খুতবার কিছু সম্পূরক বিষয়! রয়েছে!। যেমন:

১। আল্লাহর প্রশংসা করা।

২। শাহাদাতাইন পড়া।

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের! প্রতি দরুদ পাঠ করা!।

৪। তাকওয়া অবলম্বনের উপদেশ দেয়া।

৫। কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করা।

৬। ওয়াজ ও নসীহত করা।

খুতবায় যা মুস্তাহাব

১। মিম্বারে উঠে খুতবা প্রদান করা।

২। মিম্বারে উঠার সময় মুসল্লীদেরকে সালাম দেয়া!।

৩।  দুই খুতবার মাঝে সামান্য সময়ের জন্য বসা!।

৪। খুতবা সংক্ষিপ্ত হওয়া।

৫। খুতবায় দুআ করা।

জুমআর নামাজে যা নিষিদ্ধ

১। জুমআর দিন ইমাম খুতবা প্রদানকালে!কথা বলা হারাম!, হাদীসে এসেছে,; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«যদি জুম-আর দিন তুমি তোমার সাথীকে বল চুপ থাকো!» আর ওদিকে ইমাম খুতবা দিচ্ছে!, তবে তুমি অন্যায় করলে!।» (বর্ণনায় বুখারী)

২। মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে! যাওয়া মাকরুহ। তবে ইমামের জন্য তা !মাকরুহ নয়। ওই ব্যক্তির জন্যও মাকরুহ নয় যে! এরূপ না করলে সামনের খালি জায়গায়! যেতে পারছে না।

আরো পড়ুন.....

নামাজের সকল হাদিস
চিত্র সহ নামাজ শিক্ষা

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন