দুই ঈদের নামায ও নিয়ম কানুন

hadith-bangla-eidul-ajha-eidul-fitor-Eid-Al-Adha-Mubarak

হযরত আনাস রা. বলেন, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করেন, সে সময় মদিনাবাসীরা দু'টি দিন নির্দিষ্ট করে রেখে ছিলো, সে দিনগুলোতে তারা আনন্দ ও ফুর্তি করতো। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের জিজ্ঞেস করলেন, এ দিন দুটো কীসের? সাহাবায়ে কিরাম রাযি. আরয করলেন, জাহিলী যুগে এ দিনগুলোতে আমরা খুশি উদ্যাপন ও খেলা-ধূলা করতাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ দুদিনকে উত্তম দু'টি দিনে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। অর্থাৎ ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।
ওযু ও নামাযের আমলী মশক ৯৯

আমাদের ঈদের খুশি সেভাবে উজ্জাপন করা উচিত, যেভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুশির এ মুহূর্তগুলো অতিবাহিত করেছেন। ঈদের দিন যে সব আমল মাসনুন সে গুলোকে সুন্নত মনে করে আদায় করা

উচিত। সুন্নতগুলো হলো এই-

১। ঈদের দিন খুব ভোরে জাগ্রত হওয়া।
২। মিসওয়াক করা।
৩। গোসল করা।
 নিজের কাপড়গুলোর মধ্যে থেকে উত্তম কাপড় পরা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন সুন্দর ও উত্তম কাপড় পরিধান করতেন।
৫। সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৬। ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টিজাতীয় কোনো খাবার খাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভ্যাস ছিলো, ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছু খেজুর খেতেন। তার সংখ্যা বিজোড় ছিলো অর্থাৎ তিনটি, পাঁচটি, সাতটি (সহিহ বুখারী)। কিন্তু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল আযহার দিন নামায থেকে ফিরে এসে প্রথমে কিছু খেতেন না। ঈদের নামায পড়ে সর্বপ্রথম কুরবানী করতেন। অতপর কুরবানীর গোশত থেকে কিছু খেতেন।
৭। ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা।
৮। ঈদগাহে আগে আগে যাওয়া।
৯। ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা।
১০। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া। অন্য রাস্তা দিয়ে আসা।
১১। পায়ে হেঁটে যাওয়া।
১২। ঈদুল ফিতরের দিন আস্তে আস্তে তাকবির বলা। আর ঈদুল আযহার দিন জোরে জোরে তাকবির বলা। তাকবিরের বাক্যগুলো এই-

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِهِ الْحَمْدِ

ওযু ও নামাযের আমলী মশক ১০০

মাসআলা : ঈদের দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা, নিজের কাছে থাকা কাপড়গুলোর মধ্য থেকে ভালো কাপড় পরিধান করা এবং সুগন্ধি লাগানো করা মুস্তাহাব।

মাসআলা : ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে বিজোড় সংখ্যা ছুওয়ারা (শুকনা বড় খেজুর বিশেষ) বা খেজুর খাওয়া মুস্তাহাব। এগুলো পাওয়া না গেলে কোনো মিষ্টিজাতীয় বস্তু খাওয়া যথেষ্ট। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের শিরনী খাওয়া কথা প্রমাণিত নয়।

মাসআলা : ঈদের নামাযের পূর্বে ঈদগাহে বা ঘরে নফল নামায পড়া জায়িয নয়। এমনকি মহিলারাও পড়বে না। এ দিন ইশরাক ও চাশতের নামায ঈদের নামায জামআতের সাথে পড়ার পূর্বে পড়বে না। কিছু লোক ঈদগাহে পৌঁছে ঈদের নামাযের পূর্বে নফল নামায পড়ে থাকে তা সঠিক নয়।

ঈদের নামাযের নিয়্যত

ঈদের নামায শুরু করার সময় মুক্তাদি মনে এ কথা হাজির রাখবে, আমি কিবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে দু'রাকাত ওয়াজিব নামায আদায় করছি। যার মধ্যে ছয়টি অতিরিক্ত ওয়াজিব তাকবির আছে। নিয়্যতের জন্য তা মনে উপস্থিত রাখাই যথেষ্ট। নিয়্যতের কালিমাগুলো মুখে উচ্চারণ করার দরকার নেই। বাকি কেউ যদি উচ্চারণ করে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই।

ঈদের নামাযের মাসনুন তরিকা

ঈদের নামাযের নিয়ম হলো, নিয়্যতের পর তাকবিরে তাহরিমা বলে, হাত বাঁধবে, ছানা পড়বে। এরপর উভয় হাত উঠিয়ে একটু বিরতি দিয়ে দিয়ে তিনবার তাকবির বলবে। প্রথম দু'তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিবে এবং তৃতীয় তাকবিরের পর হাত বাঁধবে। এরপর সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা মিলাবে। অতপর রুকু, সিজদা করে রাকাত পূর্ণ করবে। দ্বিতীয় রাকাতে প্রথমে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা পড়ার পর রুকুতে যাবে না বরং তিনবার হাত উঠিয়ে তিনটি তাকবির বলবে। মাঝে হাত বাধবে না। এরপর হাত উঠানো ছাড়া তাকবির বলে রুকুতে যাবে এবং অবশিষ্ট নামায নিয়মানুযায়ী পূর্ণ করবে।

মাসআলা : মহিলাদের উপর জুমুআ ও ঈদের নামায ওয়াজিব নয়। অবশ্য মহিলারা শুকরিয়া হিসাবে দু'রাকাত নফল পড়তে পারে।

ওযু ও নামাযের আমলী মশক ১০১

মাসআলা : পুরুষদের ন্যায় মহিলাদের জন্যও ঈদের দিন গোসল করা এবং উত্তম পোশাক পড়া মুস্তাহাব। কেননা, এদিন খুশি ও সাজ-সজ্জার দিন।

মাসআলা: ঈদের দিন একে অন্যকে মুবারকবাদ দেয়া জায়িয।

মাসআলা: ঈদের নামাযের পর মুসাফাহা বা মুআনাকা করা মাসনুন

নয়। হ্যাঁ, যদি কোনো ব্যক্তির সাথে এ সময় সাক্ষাৎ হয় অথবা নামাযের কিছুক্ষণ পর শুধু সাক্ষাতের নিয়্যতে মুসাফাহা ও মুআনাকা করা হয় তাতে কোনো সমস্যা নেই।

মাসআলা: ঈদুল আযহার নামাযের পূর্বে কিছু কোনো পানাহার না করা মুস্তাহাব।

তাকবিরে তাশরিক

ফরয নামাযের পর একবার তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
তাকবিরে তাশরিকের শব্দগুলো এই

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلهِ الْحَمْدِ.

মাসআলা : ০৯ জ্বিলহজের ফযরের নামায থেকে ১৩ জ্বিলহজের আসরের নামায পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর পরই পুরুষদের উচ্চ আওয়াজে এবং মহিলাদের জন্য নিচু আওয়াজে তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব।

মাসআলা : তাকবিরে তাশরিক মূলত একবার পড়া ওয়াজিব। তা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি একাধিকবার পড়লেও কোনো সমস্যা নেই।

মাসআলা: মুকিম, মুসাফির, মুনফারিদ, জামাআতে আদায়কারী ব্যক্তি মহিলা এবং শহর ও গ্রামের বাসিন্দা সকলের উপর তাকবিরে তাশরিক ওয়াজিব।

মাসআলা: তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। যদি প্রতিবন্ধকতামূলক কোনো কর্ম প্রকাশ পায় যেমন: মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেছে বা কোনো কথা বলে ফেলেছে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ওযু ভেঙে ফেলেছে তাহলে এ সকল অবস্থায় তাকবিরে তাশরিক বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ওযু ভেঙে গেলে তাকবির বলবে।

মাসআলা: মাসবুকের উপরও তাকবিরে তাশরিক ওয়াজিব। সে নিজের অবশিষ্ট রাকাত পূর্ণ করার পর উচ্চ আওয়াজে পড়বে।

মাসআলা: মহিলাদের উপরও তাকবিরে তাশরিক ওয়াজিব। কিন্তু তারা একদম আস্তে আস্তে পড়বে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন