হজ্জের দিন সমুহে পঠিত দোয়া সমুহ ও জরুরি মাসায়িল

হজের জিকির ও দুআ অনেক। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দুআ- দরূদ ও জিকির-আজকার উল্লেখ করা হয়েছে।
হজের দুআ দুই প্রকার যথা:

১. সফর সম্পর্কিত।

২. মূল হজের জিকির।

সফরের সাথে সংশ্লিষ্ট দুআ সামনে সফর বা ভ্রমণের পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ। আর মূল হজের দুআগুলো এখানে তারতিবসহ উল্লেখ করব। বেশির ভাগের দলিল-প্রমাণসমূহ কিতাবের কলেবর দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উল্লেখ করব না। সেগুলো করলে পাঠকও বিরক্ত হয়ে যাবে। কেননা হজের অধ্যায়টি অনেক বড়। তাই আমরা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।৪৩২ আল-আযকার

প্রথম: যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে, তখন ভালোভাবে গোসল, অজু ও চাদর পরবে। অজু, গোসলের দুআ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর দুই রাকাত নামাজ পড়বে। নামাজের জিকিরও পূর্বে বলা হয়েছে। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সুরা কাফিরুন পড়া মুসতাহাব। দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সুরা ইখলাস পড়া মুসতাহাব। নামাজ শেষে পূর্বে উল্লেখিত যে সকল দুআ নামাজের পরে পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো পড়বে। এরপর মনে মনে ইহরামের নিয়ত করবে। সঙ্গে সঙ্গে মুখে বলা মুসতাহাব। এই বলে নিয়ত করবে-

نَوَيْتُ الحَجَّ وَأَحْرَمْتُ بِهِ عَزَّ وَ جَلَّ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতুল হাজ্জা ওয়া আহরামতু বিহি আযযা ও জাল্লা।
অর্থ: আমি হজের নিয়ত করেছি এবং আল্লাহর নামে ইহরাম বেঁধেছি। এরপর পুরো তালবিয়া পাঠ করবে। মনে মনে নিয়ত করা ওয়াজিব। আর মুখের উচ্চারণে নিয়ত করা সুন্নাত। শুধু মনে মনে নিয়ত করলেও চলবে। কিন্তু শুধু মুখে বললে, মনে মনে নিয়ত না করলে যথেষ্ট হবে না। ইমাম আবুল ফাতাহ রাজি রহ. বলেন, নিয়তের পর এ দুআ পড়া ভালো-

اللَّهُمَّ لَكَ أُحْرِمُ نَفْسِي وَشَعْرِي وَبَشَرِي وَلَحْمِي وَدَمِيْ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা উহরিমু নাফসি ওয়া শারি ওয়া বাশারি ওয়া লাহমি ওয়া দামি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টির জন্যই নিজের আত্মা, চুল, ত্বক, মাংস ও রক্ত হারাম করে নিয়েছি। কেউ কেউ বলেন, এটিও বলবে-

اللَّهُمَّ إِنِّي نَوَيْتُ الْحَجَّ فَأَعِنِّي عَلَيْهِ وَتَقَبَّلُهُ مِنِّي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি নাওয়াইতুল হাজ্জা ফাআইন্নি আলাইহি ওয়া তাকাব্বালহু মিনহু।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি হজের নিয়ত করেছি, সুতরাং এটা পুরো সমাধা করতে আমাকে সাহায্যকরুন এবং আমার পক্ষে এটাকে কবুল করুন।

-এরপর তালবিয়া বলবে-

لَيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنَّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ.
উচ্চারণ: লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাক।
অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির! আপনার দরবারে আমি হাজির! আপনার কোনো অংশীদার নেই। আমি আপনার কাছেই হাজির। সকল প্রশংসা, নেয়ামতরাজি ও রাজত্ব আপনারই। আপনার কোনো অংশীদার নেই।

এটা ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তালবিয়া।

যদি হজের সফর হয় তাহলে প্রথমবার তালবিয়া বলার সময় এভাবে বলা মুস্তাহাব'লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা বিহাজ্জতিন: আমি হাজির, হজের জন্য হে আল্লাহ'। আর উমরার সফর হলে প্রথমবার এভাবে বলা মুসতাহাব 'লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা বি-উমরাতিন: আমি হাজির, উমরার জন্য হে আল্লাহ'। প্রথমবার এভাবে তালবিয়া বলার পর আর হজ ও উমরার শব্দ বলতে হবে না। এটাই বিশুদ্ধ মত।

তালবিয়া হচ্ছে সুন্নাত। ছুটে গেলে হজ বা উমরা বিনষ্ট হবে না। এর জন্য কোনো জরিমানাও দিতে হবে না। হ্যাঁ, অনেক বড় ফজিলত ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ থেকে মাহরূম হবে। এটাই বিশুদ্ধ মত।

তবে কেউ কেউ তালবিয়া বলাকে ওয়াজিব বলেন। আবার কেউ কেউ তালবিয়াকে ফরজ বলেন ও হজের শুদ্ধতার শর্ত বলে থাকেন। তবে প্রথমটিই বিশুদ্ধ। 

অন্যের পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধলে এভাবে বলবে-

نَوَيْتُ الْحَجَّ وَأَحْرَمْتُ بِهِ لِلَّهِ تَعَالَى عَنْ فُلَانِ ، لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ عَنْ فُلَانٍ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الحَمْدَ وَالنَّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ.
উচ্চারণ : নাওয়াইতুল হাজ্জা ওয়া আহরামতু বিহি লিল্লাহি তাআলা আন ফুলানিন, লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা আন ফুলানিন লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা ওয়াল মুলক, লা শারিকা
অর্থ : আমি হজের নিয়ত করেছি এবং অমুকের পক্ষ থেকে ইহরাম সেরেছি। হে আল্লাহ! আমি অমুকের পক্ষ থেকে হাজির আপনার আমি হাজির! আপনার কোনো অংশীদার নেই। আমি আপনার কাছে হাজির। সকল প্রশংসা, নেয়ামতরাজি ও রাজত্ব আপনারই। আপনার কোনো অংশীদার নেই।

তালবিয়ার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পরে এবং নিজের ও যার জন্য ইচ্ছা দুনিয়া ও পরকালেরর কল্যাণের দুআ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাতের প্রার্থনা করবে। জাহান্নাম থেকে পানাহ চাইবে। বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে, চলতে-ফিরতে নাপাক, ঋতুস্রাব ও গোসল ফরজ অবস্থায়; অবস্থা পরিবর্তনের সময় স্থান ও কাল পরিবর্তনের সময়। যেমন রাত- দিনের আগমনের সময়, শেষ হয়ে সঙ্গীদের মিলিত হওয়ার সময়। উঠতে-বসতে, উঁচু ভূমিতে উঠতে ও ভূমিতে নামার সময়; সওয়ারিতে

হানাফি মাজহাবে তালবিয়া ওয়াজিব: হেদায়: ১/২৩৯

আরোহন ও অবতরণের সময়; নামাজের পরে ও নামাজের স্থানে সবসময় তালবিয়া পড়বে। তবে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তাওয়াফ ও সায়ি করার সময় তালবিয়া পড়বে না। কেননা তাওয়াফ ও সায়ির নির্দিষ্ট দুআ রয়েছে সেগুলো পড়বে।

তালবিয়া কষ্ট না হয় এরূপ উঁচু আওয়াজে পড়বে। মহিলারা আস্তে পড়বে। কারণ, তাদের আওয়াজ ফিতনার কারণ হতে পারে। প্রত্যেকবার তিনবার য তার চেয়ে বেশি পড়বে। তালবিয়া পড়ার মাঝখানে অন্য কোন কথা বলবে না। কেউ সালাম দিলে উত্তর দেবে। তবে এমতাবস্থায় সালাম দেয় মাকরুহ। কোন বিষয় দেখে বিস্মিত হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামের অনুসরণে এই দুআটি বলবে-ত

لَبَّيْكَ إِنَّ الْعَيْشَ عَيْشُ الْآخِرَةِ
উচ্চারণ : লাব্বাইকা ইন্নাল আইশা আইশুল আখিরাহ।
অর্থ : আমি হাজির! নিশ্চয় পরকালের সুখই প্রকৃত সুখ। দশম তারিখ ইয়াওমুন নাহারে জামরায়ে আকবায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত। তালবিয়া বলা মুসতাহাব। পাথর নিক্ষেপের আগে তওয়াফে ইফাজা করছে। এই তওয়াফ পর্যন্ত তালবিয়া বলা মুসতাহাব। উক্ত দুই আমলে যেটিই শুরু করবে, তার আগে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দেবে। এরপর থেকে তাকবির বলা শুরু করবে। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, উমরা পালনকারী পাথর চুম্বন করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া বলবে।

মক্কায় পৌঁছে যে দুআ করবে 

ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌছার পর এ দুআ পড়বে-

اللَّهُمَّ هَذَا حَرَمُكَ وأَمْنُكَ فَحَرِمْنِي عَلَى النَّارِ، وَأَمَنِّي مِنْ عَذَابِكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ، وَاجْعَلْنِي مِنْ أَوْلِيَائِكَ وَأَهْلِ طَاعَتِكَ، وَيَدْعُوْ بِمَا أَحَبَّ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা হাজা হারামুকা ওয়া ফা হাররিমনি আলান্নার। ওয়া মিন আজাবিকা ইয়াওমা তাবআসু ইবাদাক, ওয়ায আলনি মিন আউলিয়াআকা ওয়া আহলি তাআতিক ওয়া ইয়াদউ বিমা আহাব্বা।
অর্থ: হে আল্লাহ! এটা আপনার হারাম ও শান্তিস্থল। সুতরাং আমাকে জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিন এবং আপনার শান্তি থেকে নিরাপদ রাখুন, যেদিন আপনার বান্দাদের পুনরুত্থিত করবেন। আমাকে আপনার প্রিয় ও অনুগত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন। -এছাড়াও নিজের পছন্দ মতো অন্য দুআও করবে।

কাবায় প্রথম দৃষ্টি পড়ার পর যে দুআ করবে

মক্কায় প্রবেশ করে মসজিদে হারামের কাছে যাওয়ার পর কাবায় দৃষ্টি পড়ার পর দুহাত তুলে দুআ করবে। কাবা দেখার পর মুসলমানের দুআ কবুল হওয়ার কথা হাদিসে এসেছে। এ দুআটি পড়বে-

اللَّهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيفًا وَتَعْظِيمًا وَتَكْرِيمًا وَمَهَابَةٌ، وَزِدُ مِنْ شَرَّفَهُ وَكَرَّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ أَوِ اعْتَمَرَهُ تَشْرِيفًا وَتَكْرِيمًا وَتَعْظِيمًا وَبِرًا.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা জিদ হাজাল বাইতা তাশরিফান ওয়া তাজিমান ওয়া তাকরিমান ওয়া মাহাবাতুন, ওয়াজিদ মান শাররাফাহু ওয়া কাররামাহু মিম্মান হাজ্জাহু আও আবি'তামারাহু তাশরিফান ওয়া তাকরিমান ওয়া তাজিমান ওয়া বিরান।
অর্থ : হে আল্লাহ! এই ঘরের সম্মান, বড়ত্ব, মর্যাদা ও মহিমা বৃদ্ধি করে দিন। যেসব হাজি বা উমরা আদায়কারী এই ঘরকে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন করেছে, তাদেরও সম্মান, বড়ত্ব মর্যাদা ও মহিমা ও সততা বৃদ্ধি করে দিন। -এ দুআও পড়বে-

اللهم أنت السلام وَمِنكَ السلامُ، حَيْنَا رَبَّنَا بِالسلام.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, হাইয়িনা রাব্বানা বিসসালাম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি দোষ-ত্রুটি থেকে চির মুক্ত, নিরাপত্তার মালিক। আমাদেরকে নিরাপত্তার সাথে জীবিত রাখুন।

এরপর দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের যে দুআ ইচ্ছা পড়বে। মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় পূর্ব মসজিদে প্রবেশের যেসব দুআর কথা বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো পড়বে।

 👉  অনলাইনে কেনাকাটা করুনঃ  >>   

তাওয়াফের দুআ

প্রথমবার হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করার সময় এবং তাওয়াফের সময় এ দুআ পড়বে-

بسم الله وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُمَّ إِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيقًا بِكِتَابِكَ، وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتَّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ঈমানান বিকা ওয় তাসদিকান বিকিতাবিকা, ওয়া ওয়াফাআন বিআহদিকা ওয়া ইত্তিবাআন লি সুন্নাতি নাবিয়্যিকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করলাম, তিনি মহান। হে আল্লাহ! আপনার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে, আপনার কিতাব সত্যায়নের সাথে, আপনার অঙ্গীকার পূরণের সাথে এবং আপনার নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের সাথে। প্রতিবার হাজরে আসওয়াদের মুখামুখি হলে উল্লিখিত দুআ পড়বে। প্রথম তিন চক্করের সময় নিম্নোক্ত দুআ পড়বে।শাখ

اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًا مَبْرُورًا وَذَنْبًا مَغْفُوْرًا، وَسَعْيًا مَشْكُورًا.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহু হাজ্জান মাবরুরান, ওয়া জাম্বান মাগফুরান সাইয়ান মাশকুরান।
অর্থ: হে আল্লাহ! একে মাকবুল হজ, মার্জিত পাপ এবং প্রশংসনীয় সাধনা হিসাবে কবুল করুন। -আর বাকি সায়িতে এ দুআ পড়বে-

اللَّهُمَّ اغْفِرْ وَارْحَمْ، وَاعْفُ عَمَّا تَعْلَمُ وَأَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির ওয়ারহাম ওয়াফু আম্মা তালামু ওয়া আনতাল আআজজুল আকরামা। আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতাও, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও, ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অর্থ : হে আল্লাহ! মাফ করুন, দয়া করুন ও মার্জনা করুন যা সম্পর্কে আপনি অবগত তা থেকে। আপনিই সর্বোচ্চ সম্মানিত মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।

ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, পুরো তাওয়াফে নিম্নোক্ত দুআ পড়া আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়-

اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النار.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।

এছাড়াও তওয়াফরত অবস্থায় দীন-দুনিয়ার কল্যাণের জন্য দুআ করবে। একজন দুআ করে বাকিরা আমিন বললেও ভালো হয়।

হজরত হাসান বসরি রহ. বলেন, হজ পালনের সময় পনেরো স্থানে দুআ কবুল হয়- তাওয়াফের মাঝে, মুলতাজিমের কাছে, মিজাবের নিচে, বাইতুল্লায়, জমজমের নিকটে, সাফা-মারওয়াতে, সায়ির স্থানে, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে, আরাফায়, মুজদালিফায়, মিনায় এবং জামারায় পাথর নিক্ষেপের সময়। বড়ই বঞ্চিত সে ব্যক্তি যে এসব স্থানে গুরুত্বের সাথে দুআ করে না।

ইমাম ও সংখ্যাগরিষ্ঠ শাফেয়ি আলেমের মতে তাওয়াফরত অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। কেননা এটি জিকিরের স্থান। উত্তম জিকির হল কুরআন তেলাওয়াত। আবু আবদুল্লাহ হালিমি রহ. বলেন, তিলাওয়াত করা মুসতাহাব নয়। প্রথম মতটিই বিশুদ্ধ। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, নির্দিষ্ট বর্ণিত দুআ ছাড়া অন্য দুআর চেয়ে কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। আর দুআ বর্ণিত থাকলে সেগুলো পড়া কুরআন তেলাওয়াত থেকে উত্তম। কেউ কেউ বলেন, তখনও কুরআন তেলাওয়াত উত্তম।

আবু মুহাম্মাদ জুয়াইনি রহ. বলেন, হজের দিনগুলোতে এক খতম কুরআন শরিফ পড়া উত্তম। এর প্রতিদান অনেক বেশি হবে। তাওয়াফ ও তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ শেষ করে যে দুআ ইচ্ছা করছে। এই দুআটি বর্ণিত আছে-

اللَّهُمَّ أَنَا عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكِ أَتَيْتُكَ بِذُنُوْبِ كَثِيرَةٍ وأَعْمَالٍ سَيِّئَةٍ وَهَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنَ النَّارِ فَاغْفِرْ لِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনা আবদুকা ওয়াবনু আবদিকা আতাইতুকা বিজুনুবি কাসিরাতিন ওয়া আমালিন সাইয়্যিআতিন ওয়া হাজা মাকামুলআ 'য়িজি বিকা মিনান্নারি ফাগফিরলি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ। আমি আপনার গোলাম, আপনার গোলামের গোলাম। অনেক গুনাহ ও অপরাধ নিয়ে আপনার দরবারে হাজির হয়েছি। আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয়প্রার্থীর স্থান, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি বড় ক্ষমাশীল দয়াবান।

মুলতাজিমের দুআ

মুলতাজিম হল, কাবা ও হাজরে আসওয়াদের মাঝামাঝি। পূর্বে বলা হয়েছে যে, সেখানে দুআ করা মুসতাহাব। সেখানে নিম্নোক্ত দুআ পড়বে-

اللهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا يُوَافِي نِعَمَكَ، وَيُكَافِي مَزِيدَكَ، أَحْمَدُكَ بِجَمِيعِ مَحَامِدِكَ مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمُ عَلَى جَمِيعِ نِعَمِكَ مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ وَعَلَى كُلِّ حَالٍ، اَللَّهُمَّ صَلَّ وَسَلَّمْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، اللَّهُمَّ أَعِذْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، وَأَعِذْنِي مِنْ كُلِّ سُوْءٍ، وَتَنَعْنِي بِمَا رَزَقْتَنِي وَبَارِكْ لِي فِيهِ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ أَكْرَم وَفْدِكَ عَلَيْكَ، وَالْزِمْنِي سَبِيلَ الْإِسْتِقَامَةِ عَلَى يَا رَبِّ الْعَالَمِينَ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু হামদান ইওয়াফি নিআমাকা ওয়া ইউকাফিউ মাজিদাক। আহমাদুকা বি-জামিয়ি মাহামিদিকা মা আলিমতু মিনহা ওয়ামা লাম আলামু আলা জামিয়ি নিআমিকা মা আলিমতু মিনহাওয়ামা লাম আ'লাম, ওয়া আলা কুল্লি হাল। আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। আল্লাহুম্মা আয়িজনি মিনাশ শাইতানির রাজিম, ওয়া আয়িজনি মিন কুল্লি সু-ইন। ওয়া কান্নিনি বিমা রাজাকতানি ওয়া বারিক লি ফিহ। আল্লাহুম্মাজ আলনি মিন আকরামি ওয়াফদিকা আলাইকা, ওয়া আলজিমানি সাবিলাল ইস্তিকামাতি হাত্তা আলকাকা ইয়া রাব্বাল আলামিন।
অর্থ : আপনার এমন প্রশংসা করছি, যা আপনার নিয়ামতের পরিপূরক ও অতিরিক্ত নিয়ামতের জন্য যথেষ্ট। আপনার সমস্ত প্রশংসার সাথে, যা চাই জানি অথবা না জানি আপনার সমস্ত নিয়ামতের ওপর যা জানি অথবা না জানি, প্রশংসা করি। সর্বাবস্থায় আপনার প্রশংসা করি। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! জমকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে নিরাপদ রাখুন। সমস্ত অনিষ্ট থেকে তাকে মা সুরক্ষিত রাখুন। আপনার দেয়া রিজিকে তুষ্ট রাখুন, এতে বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাকে আপনার কাছে আসা শ্রেষ্ট প্রতিনিধি মনোনীত করুন এবং আমাকে অবিচলতার পথপ্রদর্শন করন হে বিশ্ব পালনকর্তা -এর পর যা ইচ্ছা দুআ করবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন