হজ্জের দিন সমুহে পঠিত দোয়া সমুহ ও জরুরি মাসায়িল

হিজর (হাতিমে কাবা) বাইতুল্লাহর অংশ। পূর্বে বলা হয়েছে যে, এখানে দুআ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। এখানে নিম্নোক্ত দুআ পড়ার কথা বর্ণিত আছে-
يَا رَبُّ أَتَيْتُكَ مِنْ شُقَةٍ بَعِيدَةٍ مُؤَمِّلًا مَعْرُوْفَكَ فَانِلْنِي مَعْرُوفًا مِنْ مَعْرُوْفِكَ تُغْنِينِي بِهِ عَنْ مَعْرُوْفِ مَنْ سِوَاكَ يَا مَعْرُوفًا بِالْمَعْرُوْفِ.
উচ্চারণ : ইয়া রাব্বি, আতাইতুকা মিন শুক্কাতিন বায়িদাতিন মুআম্মিলান মাআরুফাকা ফা আনিলনি মারুফা মিন মারুফিকা তুগনিনি বিহি আন মা'রুফি মান সিওয়াকা ইয়া মারুফান বিল মারুফ।
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, আমি বহুদূর থেকে আপনার দরবারে হাজির হয়েছি। আপনার অনুগ্রহের প্রত্যাশী হয়ে, সুতরাং আমাকে আপনার অনুগ্রহ থেকে কিছু দান করুন, যা আমাকে অন্যদের অনুগ্রহ থেকে অমুখাক্ষেী করবে।

বাইতুল্লাহতে দুআ কবুল হয়

৪৮৮. হজরত উসামা বিন জায়েদ রাযি. থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার পূর্বদিক দিয়ে প্রবেশ করতেন। তার চেহারা ও গণ্ডদেশ কাবার সাথে লাগাতেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতেন। আল্লাহর কাছে অনেক দুআ করতেন। এরপর কাবার প্রতিটি রুকনের কাছে গিয়ে চুমু দিতেন। তাকবির, তাহলিল ও তাসবিহ পড়তেন। আল্লাহর প্রশংসা করতেন। ইসতেগফার ও দুআ করতেন। এরপর কাবা শরিফ থেকে বের হতেন।

সায়ি করার সময় জিকির ও দুআ

পূর্বে বলা হয়েছে যে, এ সময় দুআ কবুল হয়। সাফা পাহাড়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাবাকে সামনে রেখে তাকবির বলা সুন্নাত। তখন এ দুআ পড়বে-

اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ ، اللهُ أَكْبَرُ ، وَلِلَّهِ الْحَمْدُ اللهُ أَكْبَرُ عَلَى مَا هَدَانَا، وَالحَمْدَ يَا عَلَى مَا أَوْلَانَا، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِ وَيُمِيتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ. لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ، مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ اللَّهُمَّ إِنَّكَ قُلْتَ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ، وَإِنَّكَ اتُخْلِفُ الْمِيعَادَ، وَإِنِّي أَسْأَلُكَ كَمَا هَدَيْتَنِي لِلْإِسْلَامِ أَنْ لَا تَنْزِعَهُ مِنِّي حَتَّى تَتَوَفَّانِي وَأَنَا مُسْلِمُ
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,ওয়ালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার আলা মা হাদানা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি আলা মা আওলানা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু মুহয়িওয়া ঘুমিতু, বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাহু, আনযাজা ওয়াআ দাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদাহু, লা ইলাহা ইল্লাহু, ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা কুলতা উদউনি আসতাযিব লাকুম, ওয়া ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিআদ। ওয়া ইন্নি আসআলুকা কামা হাদাইতানি লিইসলামি আন লা তানজিআহু মিন্নি হাত্তা তাতাওয়াফানি ওয়া আনা মুসলিমু।
অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ মহান এজন্য যে, তিনি আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, তিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তার কোনো অংশীদারিত্ব নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি জীবন-মরণ দান করেন। সকল কল্যাণ তারই হাতে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি তার অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছেন, তার বিশেষ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল (কুফরি) শক্তিকে পরাস্ত করেছেন। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আমরা তারই উপাসনা করি। আমরা খাঁটি অন্তরে তা স্বীকার করি, কাফেররা যতোই একে খারাপ মনে করুক। আল্লাহ, আপনিই তো বলেছেন: 'আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব', আর আপনি তো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। আপনার কাছে মিনতি এই যে, যেভাবে আমাকে ইসলামের দিকে পথপ্রদর্শন করেছন, একে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েন না। যাতে ইসলামের ওপর মরতে পারি।

এই দুআর পর দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণের দুআ করবে। উক্ত দুআটি ও অন্যান্য দুআ তিনবার করে বলবে। এ সময় তালবিয়া পাঠ করবে না। মারওয়ায় গিয়েও এ দুআগুলো পড়বে, যা সাফায় পড়েছিল।

হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি সাফায় দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-

👉 অনলাইনে কেনাকাটা করুনঃ >> 

اللَّهُمَّ اعْصِمُنَا بِدِينِكَ وَطَوَاعِيْتُكَ وَطَوَاعِيَةُ رَسُولِكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَجَنِّبْنَا حُدُوْدَكَ ، اَللَّهُمَّ اجْعَلْنَا يُحِبُّكَ وَتُحِبُّ مَلَائِكَتَكَ وَأَنْبِيَاءَكَ وَرُسُلَكَ، وَنُحِبُّ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ، اللَّهُمَّ حَبَّيْنَا إِلَيْكَ وَإِلَى مَلَائِكَتِكَ وَإِلَى أَنْبِيَائِكَ وُرُسُلِكَ، وَإِلَى عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ، اَللَّهُمَّ يَسِّرْنَا لِلْيُسْرَى، وَجَنَّبْنَا الْعُسْرَى وَاغْفِرْ لَنَا فِي الْآخِرَةِ وَالْأُولَى، وَاجْعَلْنَا مِنْ أَئِمَّةِ الْمُتَّقِينَ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাআসিমু না বিদীনিকা ওয়াতাওয়াতিকা ওয়া তাওয়াইয়াতু রাসুলিকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া যান্নিবনা হুদুদাকা। আল্লাহুম্মাজআলনা নুহিব্বুকা ওয়া নুহিব্বু রাসুলাকা সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামা, ওয়া মালায়িকাতাকা ওয়া আম্বিয়াআকা, ওয়া রুসুলাকা ওয়া নুহিব্বু ইবাদাকাস সালিহিন। আল্লাহুম্মা হাব্বিবনা ইলাইকা ওয়া ইলা মালায়িকাতিকা ওয়া ইলা আম্বিয়াআতিকা ওয়া রুসুলিকা ইলা ইবাদিকাস সালিহিন। আল্লাহুম্মা ইয়াসসিরনা লিল য়ুসরা,ওয়া যানিবাল উসরা, ওয়াগফির লানা ফিল আখিরাতি ওয়াল উলা, ওয়াজ আলনা মিন আয়িম্মাতিল মুত্তাকিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার দীন, আনুগত্য ও রাসুলের আনুগতো বেঁধে রাখুন। আপনার সীমালঙ্ঘন থেকে দূরে রাখুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন বানাও যাতে আপনাকে, ফেরেশতাদেরকে, নবী-রাসুলদেরকে এবং আপনার নেক বান্দাদেরকে মহব্বত করতে পারি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার কাছে, ফেরেশতাদের কাছে, নবী-রাসুলদের কাছে এবং নেক বান্দাদের কাছে প্রেমাস্পদ করুন। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য স্বস্তির পথ সুগম করে দিন এবং কষ্ট থেকে দূরে রাখুন। ইহকাল- পরকালে আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আমাদেরকে মুত্তাকিদের আদর্শ বানান। -তিনি সাফা-মারওয়ায় সায়ির সময় এ দুআ পড়তেন-
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَتَجَاوَزْ عَمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَرُ الْأَكْرَمُ ، اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِيالْآخِرَةِحَسَنَةٌ وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ : রাব্বিগ ফির ওয়ারহাম, ওয়া তাযাওয়াজ আম্মা তা'আলামু ইন্নাকা আনতাল আআজ্জুল আকরাম। আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ : হে আমার আল্লাহ! মাফ করুন, দয়া করুন ও মার্জনা করুন যা সম্পর্কে আপনি অবগত তা থেকে। আপনিই সর্বোচ্চ সম্মানিত মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শান্তি থেকে রক্ষা করুন।

সায়িসহ অন্যান্য স্থানে নিচের নির্বাচিত দুআগুলো পড়া উচিত-

اللَّهُمَّ يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ.
উচ্চারণ :আল্লাহুম্মা মুকাল্লিবাল কুলুবি সাব্বিত কুলুবানা আলা দীনিক।
অর্থ : হে অন্তরের মালিক, আপনি আমার কলবকে আপনার দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ، وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالسَّلَامَةَ  مِنْ كُلِّ إِثْمٍ وَالْفَوْزَ بِالْجَنَّةِ، وَالنَّجَاةَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিকা, ওয়া আজায়িমা মাগফিরাতিকা, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসমিন। ওয়াল ফাওজা বিলজান্নাতি ওয়ান্নাযাতা মিনান্নার।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার রহমতের কারণসমূহ, আপনার ক্ষমার সংকল্প পুণ্যের সুযোগ, সবধরনের পাপ থেকে মুক্তি, জান্নাতের সৌভাগ্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করি।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা অমুক্ষাপেক্ষিতা চাচ্ছি।

اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আয়িন্নি আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং ভালোভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّكُلِّهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، وَأَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ وَ عَمَلٍ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিনাল খাইরি কুল্লিহি মা আলিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আলাম, ওয়া আউজুবিকা মিনাশ শাররি কুল্লিহি মা আলিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আলাম। ওয়া আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া মা কাররাবা ইলাইহা মিন কাওলিন আও আমালিন, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নারি ওয়ামা কাররাবা ইলাইহা মিন কাওলিন আও আমালিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সকল মঙ্গল কামনা করি, যা আমি জানি অথবা জানি না। সকল জানা-অজানা অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং যেসব কথা ও কাজ জান্নাতের দিকে ধাবিত করে তাও। আর জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করি এবং যেসব কথা-আমল জাহান্নামের নিকটবর্তী করে তা থেকেও।

উপর্যুক্ত দুআগুলোর অনুবাদ- তেলাওয়াত করাও উত্তম। যদি সম্ভব হয় তাহলে উল্লিখিত দুআ, জিকির ও কুরআন তেলাওয়াত সবগুলোই করবে। আর যদি সব না করতে পারে, তাহলে গুরুত্বপূর্ণগুলো করবে।

আরাফায় যাবার সময় যে দুআ পড়বে

মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় মিনার দিকে তাকিয়ে নিচের দুআটি পড়বে- 

اللَّهُمَّ إِيَّاكَ أَرْجُو، وَلَكَ أَدْعُوْ، فَبَلِّغْنِي صَالِحَ أَمَلِي، وَاغْفِرْ لِي ذُنُونِي، وَامْنُنْ عَلَى بِمَا مَنَنْتَ بِهِ عَلَى أَهْلِ طَاعَتِكَ إِنَّكَ عَلَىكُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা আরজু ওয়া লাকা আদউ, ফাবাল্লিগনি সালিহা আমালি, ওয়াগফিরলি জুনুবি, ওয়ামনুন আলাইয়্যা বিমা মানানতা বিহি আলা আহলি তাআতিকা, ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছেই প্রত্যাশা করি, আপনাকেই ডাকি। আমাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করুন এবং আমার পাপসমূহ মার্জনা করুন। আমার ওপর অনুগ্রহ করুন, যেভাবে আপনার অনুগতদের ওপর করে থাকেন। নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল। -মিনা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় এ দুআ পড়বে-

اللَّهُمَّ إِلَيْكَ تَوَجَّهْتُ، وَوَجْهَكَ الْكَرِيمَ أَرَدْتُ، فَاجْعَلْ ذَنْبِي مَغْفُوْرًا، وَحَجَّيْ مَبْرُوْرًا، وَارْحَمْنِي وَلَا تُخَيِّبُنِي إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইলাইকা তাওয়াজ্জাহতু, ওয়া ওয়াজহাকাল কারিমা আরাদতু, ফাজআল জাম্বি মাগফুরান, ওয়া হাজ্জি মাবরুরান, ওয়ার হামনি ওয়ালা তুখায়্যিবনি, ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার অভিমুখী হলাম, আপনার সন্তুষ্টিই আমার ইচ্ছা। অতএব, আমার গুনাহ মাফ করে দিন, আমার হজ কবুল করুন। আমার ওপর দয়া করুন, আমাকে নিরাশ করবেন না। নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল। তালবিয়া পড়বে, কুরআন তেলাওয়াত করবে এবং সকল জিকির-আজকার ও বেশি বেশি পড়বে। নিচের

দুআটিও পড়বে-

اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابٌالنار
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শান্তি থেকে রক্ষা করুন।

আরাফায় জিকির ও দুআ

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ও আরাফার দুআ শ্রেষ্ঠ দুআ। আমি ও পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছেন এর মধ্যে উত্তম হল-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ : আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তার কোনো অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। ৫২৪

এসব দুআ-জিকির বেশি বেশি পড়া চাই। দুআর জন্য বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হল আরাফার দিন। আরাফার দিনটি হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনটি হজের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই এ দিনে দুআ, জিকির- আজকার ও কুরআন তিলাওয়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা চাই। বিভিন্ন দুআ করবে। বিভিন্ন ধরনের জিকির করবে। নিজের জন্য দুআ করবে।

৫২৪. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৯

সকল স্থানে জিকির করবে। একাকী, জামাতের সঙ্গে দুআ করবে। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়-স্বজনদের জন্য, শিক্ষক- ছাত্র, বন্ধু-বান্ধব, সকল শুভাকাঙ্খী ও সবার জন্য। এসবের মাঝে কোনো কমতি করবে না। কারণ, এ দিনটিতে কোনো কিছু ছুটে গেলে তা আর পূরণ করা যাবে না। পক্ষান্তরে অন্য দিনের ক্ষতি পূরা করা যাবে।

দুআর ক্ষেত্রে অন্তমিলের লৌকিকতা করবে না। কারণ, এতে মন সেদিকে মশগুল হয়ে যাবে। বিনয়-নম্রতা ও কাকুতি-মিনতি থাকবে না। তবে মুখ অন্তমিলে দুআ পড়তে কোনো সমস্যা নেই, ইবারতে মশগুল না হয়।

সুন্নাত হল, নীচু আওয়াজে দুআ করা। বেশি বেশি ইসতিগফার করা। মন থেকে সকল গুনাহ থেকে তাওবা করা। খুব জোরালোভাবে দুআ করা। বারবার দুআ করা। দুআ কবুল হচ্ছে না এরূপ মনে না করা। দুআর শুরু ও শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। কাবামুখী হয়ে পবিত্র অবস্থায় দুআ করা।

৪৮৯. হজরত আলি রাযি. থেকে বর্ণিত, আরাফার দিনে সেখানে অবস্থানকালে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ বেশি বেশি পড়তেন-

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَالَّذِي نَقُوْلُ وَخَيْرًا مِمَّا نَقُوْلُ اللَّهُمَّ لَكَ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي وَإِلَيْكَ مَا أَبِي وَلَكَ رَبِّ تُرَائِي ، اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَوَسْوَسَةِ الصَّدْرِ وَشَتَاتِ الْأَمْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَجِيءُ بِهِ الريح.
উচরণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কাল্লাজি নাকুলু, ওয়া খাইরান মিম্মা মাকুহু। আল্লাহুম্মা লাকা সালাতি ওয়া মাহইয়ায়্য ওয়া মামাতি, ওয়া স্থলাইকা মাআবি ওয়ালাকা রাব্বি তরাসি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবারি ওয়া ওয়াসওয়াসাতিস সাদরি ওয়া শাতাতিল আমর। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি মা তাষিউ বিহির রিছু।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার সেরকম প্রশংসা করি যেরকম আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন এবং যেরকম প্রশংসা করছি, এরচে উত্তম প্রশংসা করি। হে আল্লাহ! আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ আপনার জন্য কুরবান। আপনার দিকেই আমার প্রত্যাবর্তন এবং আপনার জন্য উৎসর্গীত আমার সম্পদ। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আজাব থেকে, কুমন্ত্রণা থেকে এবং অনিয়ম থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থী বাতাসের অনিষ্ট থেকে।

এ সময় বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। দরুদ শরিফ পড়বে। জিকির ও দুআর সঙ্গে কাঁদবে। চোখের পানি স্বার্থক হয়। গুনাহ মাফ হয়। আশা পূরণ হয়। এটি এক মহান স্থান। মহা মিলনমেলা। নেককার বান্দাদের জমায়েত এ স্থান। এ স্থান দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জমায়েত।

নির্বাচিত কিছু দুআ-

اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَ فِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়ারি আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শান্তি থেকে রক্ষা করুন।

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُالرَّحِيمُ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি জুলমান কাসিরাও, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।অর্থ: হে আল্লাহ! আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনি মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَغْفِرَةٌ تُصْلِحُ بِهَا شَأْنِي فِي الدَّارَيْنِ، وَارْحَمْنِي أَسْعَدُ بِهَا فِي الدَّارَيْنِ وَتُبْ عَلَى تَوْبَةً نَصُوحًا لَا أَنْكُثَهَا أَبَدًا، وَالْزِمْنِي سَبِيلَ الْإِسْتِقَامَةِ لَا أَزِيعُ عَنْهَا أَبَدًا.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি মাগফিরাতান তুসলিহু বিহা শাআনি ফিদ- দারাইনি ওয়ারহামনি আসআদু বিহা ফিদ্দারাইনি, ওয়াতুবু আলাইয়্যা তাওবাতান নাসুহান লা আনকুসাহা আবাদা, ওয়া আলজিমনি সাবিলাল ইসতিকামাতি লাআজিগু আনহা আবাদা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে এমনভাবে ক্ষমা করুন, যদ্দারা আমার অবস্থা উভয় জগতে সংশোধন হয়ে যায়। আমার প্রতি দয়া করুন। যাতে উভয় জগতে ভাগ্যবান হতে পারি। আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করে নিন, আমি আর পাপ করব না। আমাকে সোজা পথে আগলে রাখুন, কখনো আমি এ থেকে ভ্রষ্ট হব না।

اللَّهُمَّ انْقُلْنِي مِنْ ذُلِّ الْمَعْصِيَّةِ إِلَى عِزَّ الطَّاعَةِ، وَأَغْنِنِي بحلالك عَنْ حَرَامِكَ وَبِطَاعَتِكَ عَنْ مَعْصِيَتِكَ، وَبِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَالله وَنَوِّرُ قَلْبِي وَقَبْرِي، وَأَعِذْنِي مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ، وَاجْمَعُ لي الخير كله
উচ্চারণ:আল্লাহুম্মানকুলনি মিন জুল্লিল মাসিয়াতি ইলা ইজ্জাত তাআতি, ওয়া আগনিনি বিহালালিকা আন হারামিকা, ওয়াবি ফাদলিকা আন মাসিয়াতিকা, ওয়াবি ফাদলিকা আন মান সিওয়াক। ওয়া নাওভির কালবি ওয়া কাবরি ওয়া আয়িজনি মিনাশ শাররি কুল্লিহি। ওয়ামা লি খাইরা কুল্লাহ্।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে পাপের লানত থেকে আনুগত্যের মর্যাদার দিকে স্থানান্তর করুন। আপনার হালাল হারাম থেকে অমুখাপেক্ষী রাখুন। আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে অবাধ্যতা থেকে, আপনার অনুগ্রহে অন্যদের থেকে। আমার কলব ও কবর আলোকিত করুন। আমাকে সকল অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখুন এবং সকল কল্যাণ আমাকে দান করুন।

মুজদালিফা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে।

 পূর্বে হয়েছে যে, সব জায়গায় বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। এ জায়গাটি তালবিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কুরআন তেলাওয়াত ও দুআ বেশি বেশি পড়বে-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান। -এটা বারংবার পড়বে। 

এ দুআটিও পড়বে- 

إليكَ اللهُمَّ أرْغَبُ وَإِيَّاكَ أرْجُو، فَتَقَبَّلْ نُسُكِي وَوَفِّقْنِي، وَارْزُقْنِي فِيْهِ مِنَ الخَيْرِ أَكْثَرَ مَا أَطْلُبُ، وَلَا تُخَيِّبُنِي إِنَّكَ أنْتَ اللهُ الْجَوَادُ الْكَرِيمُ.
উচ্চারণ : ইলাইকা আল্লাহুম্মা আরগাবু, ওয়া ইয়্যাকা আরজু, ফাতাকাব্বাল নুসুকি ওয়া ওয়াফফিকনি ফিহি মিনাল খাইরি আকসারা মা আলুর তুখাইয়িবনি, ইন্নাকা আনতাল যাওয়্যাদুল কারিম।
অর্থ: আমি আপনার কাছেই প্রত্যাশা করি, আপনার কাছেই কামনা করি। সুতরাং আমার কুরবানি কবুল করুন, আমাকে তাওফিক দিন। এতে আমাকে আশাতীত প্রতিদান দান করুন, আমাকে নিরাশ করবেন না। নিশ্চয় আপনি বড় দানশীল ও মহানুভব।

এটা হল ঈদের রাত। ঈদের রাতে জাগ্রত থাকা, নামাজ পড়া, জিকির করা প্রসঙ্গে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাতের মর্যাদার সাথে স্তরে মর্যাদাও মিলিত হয়েছে। সাথে সাথে সে হারামের মাঝে আছে এবং ইহরাম অবস্থায় আছে। হাজিদের মজমায় আছে। মহান ইবাদত পালনের পর এখানে আছে। আরাফায় সেসব মহান দুআ করা পর। তাই এ সত্য গুরুত্ব অনেক।

আরো পরুন,,,,,,,

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন