অভাব দূর হওয়ার আমল ও দোয়া

অভাব দূর হওয়ার আমল ও দোয়া


আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির করে। যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে হয়ে পড়ে অতিমাত্রায় উৎকন্ঠিত। -(সুরা মাআরিজ আয়াত : ১৯-২০)। 

তাই আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের চাদর সব সময় আমাদের আবৃত করে রাখেন।

রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের মানুষ সৃষ্টি করেছেন। কাউকে গরিব বানিয়েছেন, কাউকে ধনী বানিয়েছেন। 

তুলনামূলক গরিবরা বেশি অর্থাভাবে পড়েন। আমাদের পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে এমন বহু অভাবী মানুষ রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে কঠিন রোগে ভুগছেন। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ছেলেটাকে পড়ালেখা করাতে পারছেন না এবং মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেন না।
এমন অভাবী মানুষের অভাব নেই। সেই অভাবী মানুষের অভাব দূর করার জন্য কুরআন-হাদিসে বহু আমলের উল্লেখ রয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— যে ব্যক্তি বেশি বেশি এই দোয়াটি পাঠ করবে তার অভাব দূর হয়ে যাবে।

দোয়া- আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফাকরি, ওয়াল কিল্লাতি, ওয়াজজিল্লাতি, ওয়া আউজুবিকা মিন আন আজলিমা আও উজলিমা।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দরিদ্রতা থেকে। এবং আপনার কম দয়া থেকে ও অসম্মানী থেকে। এবং আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাচ্ছি— কাউকে জুলুম করা থেকে অথবা কারও দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া থেকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ১৫৪৪)

আল্লাহতায়ালা বলেন, আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন। (সুরা ইবরাহীম আয়াত:৭)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত— রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’(তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ ও ইবনে মাজাহ)।
অভাব থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন সুরা মায়েদার ১১৪ নম্বর আয়াতে। অর্থ, মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলল— ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাজিল করুন; এটি আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য। আর আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হবে। আর আমাদের রিজক দান করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ রিজকদাতা’। (সুরা মায়েদা আয়াত : ১১৪)। 
এ ছাড়া যেসব কাজ অভাব থেকে মুক্ত করে। আল্লাহভীতি ও সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা, পরিবার,  আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, নিজের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া, এতিম মিসকিনদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা, নামাজের জন্য দুনিয়ার সব ব্যস্ততাকে দূরে রাখা, আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া, তাড়াতাড়ি বিয়ে করা, আল্লাহতায়ালার কাছে অভাব মুক্তির জন্য দোয়া করা।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে (আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিউ ওয়াতুবু ইলাইহি) আল্লাহতায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ )
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা৷ মাঝেমধ্যে সাক্ষাৎ করে আসা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি প্রিয় নবীকে (সা.) বলতে শুনেছি— যে ব্যক্তি তার জীবিকা প্রশস্ত করতে চায় এবং বাড়াতে চায়, তার আয়ু সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। (বুখারি, হাদিস  ৫৯৮৫)
হাদিসে রয়েছে- একবার হজরত আনাস (রা.) রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামাজ আদায় করল এবং নিচের এ দোয়াটি পাঠ করল-
অভাব দূর হওয়ার আমল ও দোয়া

‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল মান্নান, বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্, ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়্যুম।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তুমিই তো সব প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি দয়াশীল। তুমিই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা! হে মহান সম্রাট ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।’

তখন নবীজি (সা.) বললেন, এ ব্যক্তি ‘ইসমে আজম’ পড়ে দোয়া করেছে, (‘ইসমে আজম’ মহান আল্লাহর এমন নাম) যে নামে ডাকলে মহান আল্লাহ সাড়া দেন এবং যে নামে তার কাছে চাওয়া হলে তিনি সব চাওয়া পূরণ করেন। (আবু দাউদ) অর্থাৎ এই দোয়াটি হল ‘ইসমে আজম’।
দোয়াটি পাঠ করলে মহান আল্লাহ মুমিন বান্দার মনের সব ইচ্ছা পূরণ করবেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের মনের সব ভালো ইচ্ছা পূরণ করুন। আমিন!


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন